বর্তমান যুগে ডেটা সায়েন্স এবং মেশিন লার্নিং ক্রমাগত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই অঙ্গনে দুটি বিখ্যাত অ্যালগরিদম হল K-Nearest Neighbors (KNN) এবং K-Means Clustering। আজ আমরা সহজ ভাষায় এই দুটি মেশিন লার্নিং মডেলের মূল ধারণা, কাজের প্রক্রিয়া, উদাহরণ, প্রয়োগ ক্ষেত্র এবং তাদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করব।
কেএনএন (K-Nearest Neighbors) অ্যালগরিদম
কেনেএন এর মৌলিক ধারণা
কেএনএন অ্যালগরিদমটি মূলত একটি সুপারভাইজড লার্নিং অ্যালগরিদম যা ক্লাসিফিকেশন এবং রিগ্রেশন উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। সহজভাবে বলতে গেলে, এটি একটি ডেটা পয়েন্টের আশেপাশে যতগুলি “নিকটতম প্রতিবেশী” থাকে, তাদের ওপর ভিত্তি করে ঐ ডেটা পয়েন্টটির ক্লাস বা শ্রেণী নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি নতুন ডেটা পয়েন্ট থাকে এবং আমরা তার আশেপাশে ৩টি প্রতিবেশী দেখি, তবে ঐ ৩টি প্রতিবেশীর ওপর ভিত্তি করে ঐ পয়েন্টটি কোন গ্রুপে পড়ে তা নির্ধারণ করা হয়।
অ্যালগরিদমের কাজের পদ্ধতি
কেএনএন অ্যালগরিদম মূলত তিনটি ধাপে কাজ করে:
- ডেটা পয়েন্টের দূরত্ব পরিমাপ: একটি নতুন ডেটা পয়েন্টের ক্ষেত্রে তার আশেপাশের বিদ্যমান ডেটা পয়েন্টের সাথে দূরত্ব পরিমাপ করা হয়। সাধারণত ইউক্লিডিয়ান দূরত্ব ব্যবহার করা হয়, তবে ম্যানহাটন এবং মিংকাউস্কি দূরত্বও ব্যবহার করা যেতে পারে।
- নিকটতম প্রতিবেশী নির্বাচন: ডেটা পয়েন্টের K সংখ্যা প্রতিবেশী নির্বাচন করা হয়, যেখানে K হলো একটি প্যারামিটার।
- ক্লাস বা শ্রেণী নির্ধারণ: নির্বাচিত প্রতিবেশীগুলির শ্রেণীর ওপর ভিত্তি করে নতুন ডেটা পয়েন্টটি কোন ক্লাসের অন্তর্গত তা নির্ধারণ করা হয়।
উদাহরণসহ সহজ ব্যাখ্যা
ধরুন, একটি দোকানের ক্রেতাদের ক্রয়কৃত পণ্যগুলির ওপর ভিত্তি করে আমরা জানাতে চাই যে, একজন নতুন ক্রেতা কোন ধরনের পণ্য কিনতে আগ্রহী হবে। আমাদের কাছে ১০০ জন ক্রেতার তথ্য রয়েছে এবং আমরা জানি যে তারা কোন ধরনের পণ্য কিনেছে। নতুন ক্রেতার ক্ষেত্রে তার ক্রয়ের প্যাটার্নের সাথে মিল খুঁজে কেএন অ্যালগরিদম দিয়ে বলা যেতে পারে যে তিনি কোন ধরনের পণ্য কিনতে পারেন।
প্রয়োগ ক্ষেত্র এবং সীমাবদ্ধতা
প্রয়োগ ক্ষেত্র:
- ইমেজ রিকগনিশন: চিত্রের ধরণ সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
- রিকমেন্ডেশন সিস্টেম: পণ্য বা সামগ্রী সাজেশন দিতে সহায়ক।
সীমাবদ্ধতা:
- বড় ডেটাসেটের ক্ষেত্রে এই অ্যালগরিদম ধীর হতে পারে, কারণ এটি প্রতিটি ডেটা পয়েন্টের দূরত্ব পরিমাপ করে।
- এটি শোরগোলপূর্ণ ডেটায় প্রায়ই ভুল ফলাফল দিতে পারে, অর্থাৎ বেশি আউটলাইয়ার থাকলে নির্ভুলভাবে কাজ করে না।
কে-মিন্স ক্লাস্টারিং (K-Means Clustering)
কে-মিন্স ক্লাস্টারিং এর মূল ধারণা
K-Means Clustering হল একটি আনসুপারভাইজড লার্নিং অ্যালগরিদম যা ডেটাসেটকে বিভিন্ন ক্লাস্টারে বিভক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি ডেটা পয়েন্টগুলিকে K সংখ্যক ক্লাস্টারে ভাগ করে। K হলো পূর্বনির্ধারিত ক্লাস্টারের সংখ্যা, যা আমরা আগে থেকেই নির্ধারণ করে থাকি।
অ্যালগরিদমের কাজের ধাপ
K-Means Clustering-এর কাজের ধাপগুলি হল:
- প্রাথমিকভাবে K সংখ্যক ক্লাস্টার সেন্টার নির্ধারণ: এলোমেলোভাবে K সংখ্যক কেন্দ্র পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়।
- ডেটা পয়েন্ট ক্লাস্টারে অন্তর্ভুক্ত করা: প্রতিটি ডেটা পয়েন্টকে নিকটতম কেন্দ্রের সাথে যুক্ত করে একটি ক্লাস্টারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
- ক্লাস্টার সেন্টার আপডেট: প্রতিটি ক্লাস্টারের কেন্দ্রের গড় নির্ণয় করে কেন্দ্র আপডেট করা হয়।
- প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি: যতক্ষণ না কেন্দ্রগুলোর অবস্থান অপরিবর্তিত থাকে, ততক্ষণ প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করা হয়।
ব্যাখ্যা এবং উদাহরণ
ধরুন, একটি বড় মলে বিভিন্ন ধরনের ক্রেতা আছে। আমরা তাদের ক্রয়ের ধরণ অনুসারে গ্রুপ করতে চাই। কেএমিন্স ক্লাস্টারিং ব্যবহার করে আমরা গ্রাহকদের কেনার প্যাটার্ন অনুযায়ী কয়েকটি ভাগে ভাগ করতে পারি, যেমন – নিয়মিত ক্রেতা, উৎসবের সময় ক্রেতা, ইত্যাদি।
কে-মিন্সের সীমাবদ্ধতা এবং প্রয়োগ ক্ষেত্র
প্রয়োগ ক্ষেত্র:
- গ্রাহক বিভাজন: গ্রাহকদের বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করতে।
- চিত্র বিভাজন: চিত্রে বিভিন্ন অঞ্চলে আলাদা করার জন্য।
সীমাবদ্ধতা:
- এই অ্যালগরিদমে শুরুতেই K মান নির্ধারণ করা প্রয়োজন, যা সঠিক না হলে সঠিক ক্লাস্টারিং পাওয়া যায় না।
- বড় ডেটাসেটের ক্ষেত্রে এটি প্রচুর হিসাব করতে হয়, ফলে সময় লাগে।
কেনেএন বনাম কে-মিন্স: প্রধান পার্থক্য
কেনেএন ক্লাসিফিকেশনে ব্যবহৃত হয়, অর্থাৎ এটি একটি ডেটা পয়েন্টকে নির্দিষ্ট শ্রেণীতে ফেলে। অপরদিকে, কে-মিন্স ব্যবহার করা হয় ক্লাস্টারিং-এর জন্য, অর্থাৎ ডেটা পয়েন্টগুলিকে গ্রুপে ভাগ করা।
উপসংহার
কেনেএন এবং কে-মিন্স ক্লাস্টারিং দুটি অত্যন্ত জনপ্রিয় মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম। কেএন ব্যবহৃত হয় ক্লাসিফিকেশন-এর জন্য এবং কে-মিন্স ব্যবহৃত হয় ক্লাস্টারিং-এর জন্য। মেশিন লার্নিং এবং ডেটা সায়েন্সে এদের গুরুত্ব অপরিসীম।